Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বৈশাখ মাসের কৃষি (১৪ এপ্রিল- ১৩ মে)

বৈশাখ মাসের কৃষি  (১৪ এপ্রিল- ১৩ মে)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

বৈশাখ মাস। নতুন বছরের সূচনা। এ মাসে চলতে থাকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মেলা, পার্বণ, উৎসব, আদর, আপ্যায়ন। পুরনো বছরের ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন দিনের প্রত্যাশায় কৃষক ফিরে তাকায় দিগন্তের মাঠে। নতুন বছরের সবাইকে শুভেচ্ছা। সেই সাথে আসুন এক পলকে জেনে নেই বৈশাখে কৃষির করণীয় দিকগুলো।


বোরো ধান
ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে। নাবি বোরো ধানের থোড় আসার সময় পানির অভাব না হয় তাই আগে থেকেই সম্পূরক সেচের জন্য মাঠের এক কোণে মিনি পুকুর তৈরি করতে হবে। ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এ মাসে বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, গান্ধিপোকা, লেদাপোকা, ছাতরাপোকা, পাতা মোড়ানো পোকার এবং এ সময় ধানক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগের আক্রমণ হতে পারে। বালাই দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শণ করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। বালাই আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এ মাসে শিলাবৃষ্টি হতে পারে, বোরো ধানের ৮০% পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।

 

আউশ ধান
আউশ ধানের জমি তৈরি ও বীজ বপনের সময় এখন। বোনা আউশ উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং রোপা আউশ বন্যামুক্ত আংশিক সেচনির্ভর মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিম্ন জমি আবাদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশপ্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিনির্ভর বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করত হবে। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। আউশের উন্নত জাত হিসাবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৩ ও ব্রি ধান৮৩ এবং রোপা হিসেবে বিআর২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৯৮ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৭ । এ ছাড়াও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকাসহ, পাহাড়ি এলাকার জমিতে বিনা ধান-১৯ চাষ করতে পারেন তবে বীজ প্রাপ্তির জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

 

ভুট্টা (খরিফ)
খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

 

পাট
বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। বিজেআরআই তোষা-৭, ও-৩৮২০, ও-৭৯৫ ভালো জাত।
দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে তোষা পাট ভালো হয়।
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৪ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সাথে মিশিয়ে শুকিয়ে নিয়ে জমিতে সারিতে বা ছিটিয়ে বুনতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। ভালো ফলনের জন্য  শতাংশপ্রতি ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময়  শতাংশপ্রতি ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০  কেজি দস্তাসার দিতে হবে। শতাংশপ্রতি ২০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে।  

 

শাকসবজি
বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০/৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন। লতানো সবজির জন্য  মাচা তৈরি করে নিতে হবে। দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ও ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য গাছের বাড়বাড়তি বেশি হলে ১৫-২০ শতাংশ পাতা লতা কেটে দিতে হবে।


কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাপড়িগুলো ফেলে দিয়ে পরাগমুন্ডটি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের ঘষে হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কুমড়াজাতীয় ফসলে মাছি পোকা দমনে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।


গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চাইলে বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ১০, বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৮ বা বিনা টমেটো ৩, বিনা টমেটো ৪-এর চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে হলে পলিথিনের ছাওনির ব্যবস্থা করতে হবে সে সাথে এ ফসলটি সফলভাবে চাষের জন্য টমেটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি টমেটোটোন মিশিয়ে ফুল আসার পর ফুলের গায়ে ৫-৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
 

গাছপালা
এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ সময় কাঁঠালের নরম পচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুর ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় সুস্থ সবল, নারিকেল চারা উন্নত ও খাটো জাতের নারিকেল চারা এবং গ্রামের রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যত্ন, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ৩-৪ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে। বৃষ্টি হয়ে গেলে পুরানো বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার করে মাটি ও কম্পোস্ট সার দিতে হবে এবং এখনই নতুন বাঁশ ঝাড় তৈরি করার কাজ হাতে নিতে হবে। যারা সামনের মৌসুমে গাছ লাগাতে চান তাদের এখনই জমি নির্বাচন, বাগানের নকশা প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রাথমিক কাজগুলো সেরে রাখতে হবে।

 

প্রাণিসম্পদ
ব্রুডার হাউজের শেডে মুরগির বাচ্চা তোলার সাথে সাথে পরিমাণ মতো ভিটামিন সি ও গøুকোজ খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরমে লেয়ার হাউসে শেডের চাল বা ছাদে তাপ বিকিরণ করতে পারে এমন সাদা, অ্যালুমিনিয়িাম রঙ এবং প্রয়োজনে পাইপ বা ঝর্ণার মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া জরুরি। সেজন্য পোলট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উপযুক্ত টিকা প্রদানের পাশাপাশি পুষ্টি ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার দিকে অধিকতর নজর দিতে হবে।


গোখাদ্যের জন্য নেপিয়ার, বাজরা, প্যারা, ভুট্টা, ইপিল ইপিলের চাষ করার ভালো সময় এখন। বাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, পতিত জায়গায় গোখাদ্যের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। গাভীকে ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানো না হয়ে থাকলে প্রতি দুই মাস অন্তর পানি বা খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এ সময়ে গবাদি পশুর ক্ষুরারোগ ও ভাইরাস রোগ দমনে ভেটেরনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে।
 

মৎস্যসম্পদ
বৈশাখ মাস পুকুরে মাছ ছাড়ার উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে পুকুর তৈরি অর্থাৎ কাদা সরিয়ে, চুন প্রয়োগ করে, আগাছা পরিষ্কার, পানি দেয়া, পানি পরীক্ষা, পরিমাণ মতো সার দেয়া, পুকুর পাড়ে নিত্য পাতা ঝরা গাছ ছাঁটাই বা কেটে ফেলাসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে হবে। এরপর প্রতি শতকে মিশ্রচাষের জন্য ৩০-৪০টি ৪-৫ ইঞ্চি বড় সুস্থ সবল পোনা ছাড়তে হবে। পানির ৩ স্তরের কথা বিবেচনা করে তেলাপিয়া, সরপুঁটি, নাইলোটিকা, কার্পজাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল, কালো বাউস এবং সম্ভব হলে চিংড়ি পোনাও ছাড়া যাবে। পোনা সংগ্রহের সময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।


প্রিয় পাঠক, বৈশাখ আসে আমাদের জন্য নতুন আবাহনের সৌরভ নিয়ে। সাথে আঁচলে বেঁধে নিয়ে আসে কালবৈশাখীকে। কালবৈশাখীর থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষিতে আগাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুবিবেচিত লাগসই কৌশল আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা  কৃষিকে নিয়ে যেতে পারব সমৃদ্ধির ভুবনে। আবারও কথা হবে আগামী মাসের কৃষিকথায়। আপনাদের সবার জন্য নতুন বছরের শুভ কামনা। য়

সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল :  editor@ais.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon